আজ সোমবার বিকাল ৫:২৩, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
‘হয়তো মোদের যোগদান দিন, নয়তো মোদের জীবন নিন; এক দফা এক দাবি, আমাদের নিয়োগ দাবি; উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এমন স্লোগানে রবিবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা। শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মহাসমাবেশ থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়মুখী হন আন্দোলনকারীরা। তবে পথিমধ্যে হাইকোর্ট মাজারের সামনে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার এবং লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
বিকেল চারটার পর পুলিশের এই পদক্ষেপে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তবে এর আগে তাদের সচিবালয়মুখী মিছিল থামাতে এবং সড়ক থেকে সরাতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় সড়কে। বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে টানা ১১ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা।
বেলা ১১টা থেকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তাদের পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ শুরু হয়। বিকেল তিনটার দিকে তারা শাহবাগ থেকে পদযাত্রা শুরু করেন।
শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে হাইকোর্টে মাজার রোডের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। পরে হঠাৎ সচিবালয়ের দিকে রওনা দেন। এ সময় পুলিশ শিক্ষা ভবনের সামনের সড়কে তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়।
বিকেল চারটার দিকে তাদের ওপর জলকামান থেকে পানি ছিটানো হয়। তখন আন্দোলনকারীরা ওই রাস্তায় অবস্থান নেন। পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তবে জলকামানের তীব্র গতির পানির মুখেও রাস্তায় শুয়ে পড়েন নারী প্রার্থীরা। পরে পানি ছিটানো বন্ধ করে পুরুষ প্রার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে সেখানে থেকে সরে যান। তবে নারী প্রার্থীরা রাস্তা ছাড়েননি। ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটা করা হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা যে যার মতো দৌড়ে ওই এলাকা ত্যাগ করেন।
শবনম ফারিহা নামের এক আন্দোলনকারী বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। পুলিশ তাতে বাধা দিয়েছে। লাঠিপেটা ও পরে জলকামান ব্যবহার করেছে। এমন একটা যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ কেন জবরদস্তি করছে, এটা বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাব না।
আন্দোলনকারী সানজিদা আক্তার রুমা বলেন, প্রতিযোগিতা করে, সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরে ১১ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করতে হচ্ছে, পুলিশের মার খেতে হচ্ছে। এত অন্যায় হচ্ছে, এটা বলে বোঝাতে পারবেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণে আসতেই পুলিশ তাদের আটকে দেয়। তখন সেখানেই অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এতে পুলিশের সঙ্গে হট্টগোল বাধে। পুলিশ প্রথমে আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সরছিল না। পরে জলকামান থেকে গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়। এতেও কাজ হচ্ছিল না। এরপর পুরুষদের লাঠিপেটা করা হলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তবে নারী আন্দোলনকারীদের সরানো যাচ্ছিল না। গায়ে ব্যানার পেঁচিয়ে জলকামানের পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। ভেজা শরীর নিয়েই সড়কে শুয়ে পড়েন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। পরে কাঁদানে গ্যাস, ব্যাপক জলকামান আর লাঠিচার্জে চারটার পর সড়ক থেকে সরে যেতে বাধ্য হন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে তারা জাতীয় জাদুঘরের সামনে চলে যান।
শাহবাগ ও হাইকোর্ট মাজারে আন্দোলনকারীদের সড়ক অবরোধের ফলে এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কে আটকে যায় যানবাহন। ফলে এই রুটে চলাচলকারী যানবাহন ও সাধারণ মানুষ যানজটের ভোগান্তিতে পড়েন।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। দুপুরের পর তারা পদযাত্রা করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হাইকোর্ট মাজারের সামনে এসে তারা প্রেস ক্লাবের দিকে না গিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা দেন। তখন তাদের ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেওয়া হয়। তারা ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। চারটার পর এই এলাকা দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।