আজ সোমবার ভোর ৫:৩০, ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা কর্মসূচিতে গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন কমায় বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে রোগটি নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। এতে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। তবে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) দাবি চ্যালেঞ্জ বাড়লেও নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডে তেমন প্রভাব পড়বে না।
এনটিপির একজন সাবেক লাইন ডিরেক্টর যুগান্তরকে বলেন, প্রতি তিন বছর অন্তর বাংলাদেশ গ্লোবাল ফান্ড থেকে ১২৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পেত। সরকারের নিজস্ব বরাদ্দের বাইরে এনটিপিতে ইউএসএআইডি গ্লোবাল ফান্ডের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার পেত বাংলাদেশ। যার ৬০ ভাগই সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে যক্ষ্মা শনাক্তকরণে ব্যবহৃত যন্ত্র, ল্যাব ও রিএজেন্টে ব্যয় করা হতো। ফান্ড বন্ধ হওয়ায় সরকারকে এখন একাই করতে হবে। ফান্ড বন্ধের সঙ্গে তাদের জনবলও থাকবে না। এতে উভয় সংকটে পড়বে সরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, যক্ষ্মা একটি সংক্রামক বায়ুবাহিত রোগ যা মূলত মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস দিয়ে সৃষ্ট এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। টিবি (টিউবারকুলোসিস) আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি বা থুথু বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যক্ষ্মা বিশ্বব্যাপী ১৩ নম্বর মরণঘাতী রোগ। বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক এবং যক্ষ্মার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। চিকিৎসকরা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, অনিয়মিত আহার, পুষ্টিকর খাদ্য ও ভিটামিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণের অভাব, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনেও যক্ষ্মা হয়। এছাড়া নোংরা পরিবেশ, স্যাঁতসেঁতে, আলো-বাতাসহীন পরিবেশেও রোগটির প্রকোপ বাড়ে। সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি কাঁশি, জ্বর, কাশির সঙ্গে কফ এবং রক্ত যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষ্মার প্রধান উপসর্গ।
প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ‘প্রতিশ্রুতি, বিনিয়োগ ও সেবাদান দ্বারা সম্ভব হবে যক্ষ্মাযুক্ত বাংলাদেশ গড়া’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ (সোমবার) দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্যে ডব্লিউএইচও যক্ষ্মা প্রতিরোধে টেকসই প্রতিশ্রুতি, আর্থিক বিনিয়োগ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং যত্নের ওপর জোর দিয়েছে। সংস্থাটি বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে আন্তর্জাতিক তহবিল হ্রাস পাওয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূলের বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলেও জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মায় মৃত্যুহার ২০১৫ সালের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বাংলাদেশের। নতুনভাবে সংক্রমিত রোগীর হারও ৯০ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর অন্যতম একটি ছিল যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি।
সম্প্রতি সংস্থাটি সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনাশিপের ভিত্তিতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলো জানিয়েছে গ্লোবাল ফান্ড বিশেষ করে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগে ভাটা পড়ছে। এর প্রভাবে মা ও শিশুমৃত্যু হার, অপুষ্টির পাশাপাশি দেশে যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইসিডিডিআর,বি) হাজারেরও বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করেছে, যাদের বেশির ভাগই ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত টিউবারকুলোসিস প্রকল্পের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. জুবাইদা নাসরীন যুগান্তরকে বলেন, ইউএসএআইডি পাশে না থাকায় কিছু স্টেকহোল্ডার কমলেও বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
এদিকে আজ সকাল ৯টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে সচেতনতামূলক র্যালি এবং সকাল ১০টায় আলোচনা সভা হবে। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীদের বিশেষ সেবাদান করা হবে। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে যক্ষ্মা নির্মূলে নিয়োজিত সংস্থাগুলো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে।