আজ সোমবার সকাল ১১:২৯, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
২৪ এর অভূতপূর্ব ঘটনায়, বাংলাদেশ ছাত্র জনতার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তির পর, বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। ঠিক সে প্রত্যাশাকে ধারণ করে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি ও জনমত তৈরিতে কাজ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি প্ল্যাটফর্মটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করা তরুণ নেতারা।
তারা বলছেন, পূর্বের সকল মতাদর্শিক বিভাজনের ইতি টানতে চান। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রদের সামনে রেখেই নতুন দল গোছানোর কথা জানান নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম। তিনি আশা করেন, তারুণ্য নির্ভর এই দল রাজনীতিতে পুরনোদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
সার্জিস বলেন, “রাজনৈতিক দলটি আগে আসবে, এরপরে এই রাজনৈতিক দলের নাম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত প্রত্যেকটি জায়গায় যাবে। তখন মানুষ এই নাম নিয়ে আলোচনা করবে। আমরা বিশ্বাস করি, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পাঁচ যুগে যা করেছে, এই রাজনৈতিক দল তরুণদের নেতৃত্বে যেটা আসতে যাচ্ছে, আগামী এক যুগে তাদেরকে স্পর্শ শুধু করবে না, তাদেরকে ছাড়িয়ে যাবে।”
তরুণদের সমন্বয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। নেতা নির্বাচনে বিতর্ক উঠলেও সেটিকে দলের গণতান্ত্রিক চর্চা হিসেবেই দেখছেন সংগঠনটির মুখপাত্র। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, “এ ধরনের একটা মাইল প্রতিযোগিতাকে আমরা বরঞ্চ মনে করি যে এটা দল গঠনের জন্য এবং দলের ডেমোক্রেসিকে স্টাবলিশ রাখার জন্য ভালো। নাহিদ ইসলাম একদম সুনির্দিষ্টভাবে চলে আসছেন, এরকম কোন সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি। কে বা কারা বিভিন্ন পোস্টে বসবেন, এটা শুধু সদস্য সচিবের ক্ষেত্রে নয়, এখানে প্রত্যেকটা পোস্টের ক্ষেত্রে আমরা আসলে সকলের কাছ থেকে মতামতটা নেওয়ার চেষ্টা করব।”
দল গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করে নিজেদের নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলেন সংগঠনটির সদস্য সচিব। তিনি জানান, গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে কাজ করবে নতুন দল। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, এটি একটি নির্বাচনী জোটও হতে পারে। সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বলেন, “নতুন একটি সংবিধানের প্রেক্ষাপটে এবং সে সংবিধানকে কার্যত প্রণয়নের দায়িত্ব যে গণপরিষদের হাতে, সেই গণপরিষদ নির্বাচনের কথা আমরা বলছি। যদি গণপরিষদ নির্বাচন হয়, তার জন্য আমরা আমাদের যোগ্য প্রার্থী যারা আছে, তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, এমন অনেক মানুষজনকে আমাদের রাজনৈতিক জোটও হতে পারে।”
দেশের গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে ছাত্রদের দলের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন নতুন দলের আদর্শিক ভিত্তি তৈরি করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে ছাত্রদের বিকল্প নেতৃত্ব তৈরির পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডঃ আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, “এই বিপ্লবের সফলতার জন্য ছাত্রদের নিরন্তর উপস্থিতি, নিরন্তর প্রেসার, নিরন্তর উপদেশনা এবং অবস্থান দরকার। প্রয়োজন তৃণমূল থেকে একেবারে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত লিডারশিপের মানে বিকল্প লিডারশিপের অবস্থান তৈরি করা। এটা খুবই কঠিন ব্যাপার। একটা রাজনৈতিক দলকে তার আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি গোছাতে অনেক সময় লাগে। এটা তো এরকম না যে, ‘ফাইয়াকুন’ মানে বললাম আর হয়ে গেল।”
সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে লড়াই শুরু হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, সেটি এখনো অধরা রয়ে গেলেও, নতুন দলের মাধ্যমে সকল স্তরে সাম্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করার কথা জানান তরুণ নেতারা।