আজ সোমবার সকাল ১১:৩৩, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
ইমোজি ক্লিক করা ছাড়া ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে আর কিছু নাই বলে মন্তব্য করেছেন খ্যাতিমান লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, বিস্মিত ও হতাশ হওয়ার কিছু নাই। যে গণঅভ্যুঅত্থানের শক্তির মধ্যে নানাবিধ প্রবণতা এবং পরস্পরের বিরোধিতা দেখছি। গণঅভ্যুত্থানের পূর্ণ বিজয়ের আগেই সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটে গিয়েছে।একথা আমি বারবারই বলেছি ও ব্যাখ্যা করেছি। প্রতিবিপ্লব ঘটলে বিভিন্ন শ্রেণী ও স্বার্থান্বেষী মহল এবং বাইরের শক্তি জনগণকে বিভক্ত করে এবং সমাজে অসহিষ্ণুতা, দ্বন্দ্ব ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। এটাই বাস্তবতা এতে বিভ্রান্ত হবার কিছু নাই। দুষমনদের হাততালি এবং আওয়ামি ফ্যাসিস্টদের হা হা রিয়েক্ট দেওয়া দেখেও হতাশ হবার কিছু নাই। ইমোজি ক্লিক করা ছাড়া ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে আর কিছু নাই। কিন্তু দুষমনদের আলাদা করে শনাক্ত করা যেমন জরুরি তেমনি গণ অভুত্থানের নেতৃত্ব দানকারি বিভিন্ন পক্ষ, শক্তি এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখাই এই সময়ের প্রধান কাজ।
তিনিবলেন, প্রতিবিপ্লবী রাজনীতি মোকাবিলা এবং লড়াকু জনগণের কাতারে বিভাজন তৈরি প্রতিরোধের একমাত্র পথ হচ্ছে এখনকার রাজনৈতিক কর্তব্য সুস্পষ্ট করা, জনগণের কাছে সহজ ও পরিচ্ছন্ন ভাবে নীতি ও কৌশল হাজির করা। প্রতিবিপ্লবী পরিস্থিতি মোকাবিলার আর কোন কার্যকর পথ নাই। এটাই একমাত্র পথ। আসুন আমরা তা নিয়ে আলোচনা করি, মনোযোগী হই। এখনকার কাজ:
১. রাজনৈতিক মেরুকরন স্পষ্ট করা। মোটা দাগে পরস্পর বিরোধী দুটি ধারা স্পষ্ট:
ক. লুটেরা মাফিয়া খুনি শ্রেণীর সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবী ধারা
এই ধারা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রেখেছে, বাতিল করেনি এবং উপদেষ্টাদের বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট সংবিধান রক্ষার শপথ করিয়েছে এবং চুপ্পুকে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রেখেছে ইত্যাদি। এই প্রতিবিপ্লবী ধারা গণভ্যুত্থানের ব্যক্ত জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হিশাবে ‘জুলাই ঘোষণা’ দিতে দেয় নি। সংবিধান বাতিল দূরের কথা বরং সংস্কারের নামে নানান টালবাহানা করে পুরানা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম রেখেছে। এই ধারা মূলত আওয়ামী-ফ্যাসিস্ট ধারার সহযোগী এবং দিল্লির সহযোগিতায় এ ধারা লুটেরা, মাফিয়া ও ফ্যাসিস্ট শ্রেণীকেই ক্ষমতায় আনবার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে চলেছে। এরা সশস্ত্র এবং এদের হাতে বিপুল লুট করা অর্থ রয়েছে। এরা দ্রুত নির্বাচন চায়, কারন তারা মনে করে বিদ্যমান সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের অধীনে অস্ত্র ও অর্থের বলে নির্বাচনে তারা অনায়াসেই ক্ষমতা দখল করে নিতে পারবে এবং গণভ্যুত্থানের নেতা-কর্মীদের চরম শাস্তি দিতে পারবে। দ্রুত নির্বাচন করা গেলেই গণহত্যার ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার বন্ধ করে দেওয়া যাবে এবং পুরানা খুনি ব্যবস্থা কায়েম রাখা যাবে।
খ. ছাত্র-জনতা-সৈনিকের গণঅভ্যুত্থানের ধারা বা গণরাজনৈতিক ধারা
এই ধারার সারকথা হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি, অভিপ্রায় ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অসম্পূর্ণ অভ্যুত্থানকে বিজয়ী গণ অভ্যুত্থান বা পূর্ণ বিজয়ের দিকে ধাবিত করা। এই ধারার প্রধান দাবি হচ্ছে ফ্যাসিট সংবিধান বাতিল, নতুন ‘গঠনতন্ত্র’ (Constitution) প্রণয়ণের জন্য গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করা, নিজেদের সচেতন ও প্রাজ্ঞ করে তোলার পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার কাজ সবার আগে করতে হবে। যেমন ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ মানে কি? ‘গণ সার্বভৌমত্ব’ কায়েমই গণতন্ত্র। গণসার্বভৌমত্ব কায়েম মানে রাষ্ট্র, সরকার এবং প্রশাসনের সকল স্তরে জনগণের সরাসরি নীতি প্রণয়ণ বা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা অর্জন। এই গণক্ষমতা অর্জন ছাড়া জনগণ লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর ভয়াবহ শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তি পাবে না। আমাদের অতি দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও বিকাশ দরকার। দরকার সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ।