আজ সোমবার দুপুর ১২:২১, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
আদালত চত্বরে ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পেছন থেকে ছুটে আসেন এক মা,ছেলের পিঠে চাপড়ে বলেন-‘ভয় নেই বাবা, নো চিন্তা’। কিন্তু কী ঘটেছিল সেদিন?
কোটা আন্দোলনের সময় আদালত চত্বরে মায়ের সাহস জোগানো দৃশ্য ভাইরাল হয়েছিলো।তরুণটির পরিচয়–তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলুর ছেলে, ওমর শরীফ মোহাম্মদ ইমরান সানিয়াত।
মা-ছেলের আবেগঘন মুহূর্ত দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলো, কিন্তু এবার উঠে এসেছে তার উপর চলা ভয়াবহ নির্যাতনের বিবরণ।
রিমান্ডের প্রতিটি দিন সানিয়াতের জন্য ছিল নরকতুল্য। সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর প্রার্থনা করতেন। গভীর রাতে তার মাকে ফোনে রেখে তাকে নির্মমভাবে প্রহার করা হতো, যাতে মা সন্তানের আর্তনাদ শুনতে পান।
রাতের খাবারের জন্য ছোট ভাইকে নিয়ে বের হয়েছিলেন সানিয়াত। দোকান থেকে কেক কিনেই বের হতেই ডিবির জ্যাকেট পরা সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে। এরপর গাড়িতে তোলে, খোঁজা হয় বুলুকে। হাসপাতালে ভর্তি মায়ের কাছে পৌঁছায় ডিবি, কিন্তু নার্সরা বাধা দেন। এরপর সানিয়াতকে নিয়ে চলে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রিমান্ডে নিয়ে তাকে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের কথা স্বীকার করানোর চেষ্টা চলে। রামপুরা থেকে উত্তরা পর্যন্ত সহিংসতার নেতৃত্ব দিয়েছেন-এমন জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির চেষ্টাও হয়। কিন্তু তার বাবা-মা কিছুই জানতেন না, ছেলেকে হারিয়ে একদিন পর মর্গে পর্যন্ত খুঁজতে যান তারা।
একদিন পর সানিয়াতকে আদালতে হাজির করা হয়, পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় মা তাকে দেখে দৌড়ে এসে পিঠ চাপড়ে সাহস দেন। এরপর থেকেই তার উপর চলে লাগাতার টর্চার। ভাইরাল ভিডিও দেখে আরও ক্ষিপ্ত হয় ডিবি সদস্যরা, টর্চারের মাত্রা চরমে ওঠে।
প্রতিদিন ১৫-১৬ ঘণ্টা উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হতো, শরীরের নিচের অংশ ফুলে রক্ত জমাট বাঁধত। চিৎকার করলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ানো হতো। একপর্যায়ে প্লায়ার দিয়ে নখ চেপে ধরার চেষ্টা হয়। সানিয়াত একটু হাঁটতে পারছিল, তা দেখেই ক্ষিপ্ত হয় কর্মকর্তারা।পানি চাইলে দেওয়া হতো না, বরং শাস্তি হিসেবে জোরপূর্বক হাঁটতে বাধ্য করা হতো। আদালত চত্তরে মায়ের সঙ্গে ভিডিওর কথা উঠলে ব্যঙ্গ করত ডিবি কর্মকর্তারা, আর মারধর করত আরও নির্মমভাবে।
সেই সানিয়াত, মুক্তি পাওয়ার পর লাঠির উপর ভর করে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোজখবরও নিয়েছেন।