আজ রবিবার রাত ৩:০০, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

৬০ এর পরেও সুখী থাকতে যে ৮ টি কাজ অবশ্যই করবেন

নিউজ ডেস্ক |দুরন্ত নিউজ .কম
আপডেট : মার্চ ২, ২০২৫ , ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ
ক্যাটাগরি : জীবনযাপন

বয়স বাড়া নিয়ে আমাদের একটি ভুল ধারণা রয়েছে।

ধারণাটি হলো, বয়স বাড়লে আমাদের জীবন ম্লান হয়ে যায়। ৬০ এর পরে আমরা পরিপূর্ণ বোধ করি বা করি না, যেন এই বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু জীবন এভাবে চলে না।

সত্যটি হল, আজ আমরা যে কাজগুলো করি, কয়েক দশক পর আমরা তার আনন্দ, শান্তি এবং ফলাফল পাব। এর অর্থ সুখী ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা নয়, বরং এটি ধীরে ধীরে তৈরি করার চেষ্টা।

এর মধ্যে আপনার কিছু সিদ্ধান্ত অন্যদের অবাক করে দিতে পারে। তবে এরা আপনার ৬০ ও তার পরেও দেখাবে যে; আপনি কেবল জীবিত নন, আপনি সমৃদ্ধ হচ্ছেন।

ভবিষ্যতে নিজের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার জন্য আপনি যে কাজগুলো শুরু করতে পারেন তা হলো:

১) সত্যিকারের বন্ধুত্ব করুন

একাকীত্ব রাতারাতি হয় না। এটি ধীরে ধীরে আমাদেরকে জেঁকে ধরে, যতক্ষণ না একদিন আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের একসময় যে গভীর বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা ছিল, তা আর নেই।

বার্ধক্যেও সুখী থাকতে হলে, দৃঢ় বন্ধুত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। শুধুমাত্র পরিচিতি বা সাধারণ মিথস্ক্রিয়া নয়, আপনাকে সত্যিই জানে এমন লোকদের সাথে বাস্তব, অর্থপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন।

এই ধরনের বন্ধুত্ব ধরে রাখার জন্য চেষ্টা প্রয়োজন। যোগাযোগ রাখা, সময় দেওয়া, বিপদে পাশে থাকা। জীবন ব্যস্ত হয়ে ওঠে, তবে আপনি এখন যে সম্পর্কগুলো তৈরি করবেন সেগুলোই আপনাকে পরবর্তীতে সঙ্গ দিবে।

বাস্তবতা হলো, আমাদের সবারই নিজের মানুষ প্রয়োজন। আপনি যদি আপনার ৬০ এবং তার পরেও সত্যিই সুখী হতে চান তবে সেই সংযোগ গুলো বজায় রাখুন।

২) একতরফা সম্পর্ক ত্যাগ করুন

সব সম্পর্ক টিকবে না। কিছু লোক প্রাকৃতিক ভাবে দূরে সরে যায়। কিছু মানুষ থেকে যায়, তবে তারা যা দেয় তার চেয়ে বেশি আপনার কাছ থেকে নেয়। এ ধরণের একতরফা সম্পর্ক ধরে রাখা কেবল দীর্ঘমেয়াদে জীবনকে একাকী করে তোলে।

৩) বিভ্রান্তির চেয়ে গভীরতা চর্চা করুন

“আমরা যা করি, তাতেই পরিণত হই। সুতরাং শ্রেষ্ঠত্ব একটি কাজ নয়, বরং একটি অভ্যাস” – উইল ডুরান্ট।

বিক্ষিপ্ত হয়ে এমন কাজগুলোতে ব্যস্ত না থাকা যা আসলে গুরুত্বপূর্ণ নয়, গভীর চিন্তাভাবনা এবং কথোপকথন যা আমাদের অস্বস্তিকর করে তোলে, সেগুলো এড়িয়ে চলা।

আপনি আজ যে অভ্যাসগুলি তৈরি করেছেন, যেভাবে আপনি আপনার সময় ব্যয় করেন, আপনার অভিজ্ঞতার গভীরতা- এগুলি আপনাকে একজন একক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলে। যদি প্রতিটি দিন সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ কিনা তা না ভেবে, একটি থেকে আরেকটি কাজে ছুটে বেড়ানো হয়, তবে পরবর্তীতে শূন্যতা দেখা দিতে পারে।

আপনার ৬০ এ আপনি যে জীবন নিয়ে গর্বিত হবেন তা কথার উপর নয় বরং কাজের উপর নির্মিত হবে।

৪) নিজের শরীরের যত্ন নিন

মানবদেহ আমাদের ৩০ এর দশকের প্রথম দিকে পেশী ভর হারাতে শুরু করে। আমরা যখন আমাদের ৬০ এর দশকে পৌঁছাই, তখন এই ক্ষতি দৈনন্দিন চলাফেরা- দাঁড়ানো, ভার বহন করা, এমনকি হাঁটাচলাকে কঠিন করে তুলতে পারে। তবে এর কারণ কেবল বার্ধক্য নয়। এটা অবহেলা।

আজকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সামনের বছরগুলিতে আমরা কতটা স্বাধীনভাবে এগিয়ে যাব তা নির্ধারণ করে। আপনার শরীরের যত্ন নেওয়া মানে পরিপূর্ণতার পিছনে তাড়া করা নয়। বরং ভালোভাবে খাওয়া দাওয়া করা, শক্তিশালী রাখা, দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা নিশ্চিত করা। কারণ এক সময়, সুখ আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে তা নয়; বরং আপনি এখনও কী করতে সক্ষম তার উপর নির্ভর করবে।

৫) গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় ব্যয় করুন

সময় এমন একটি জিনিস যা আমরা কখনই ফিরে পাই না, তবে বেশিরভাগ লোকেরা তা বুঝতে পারে না যে তারা কতটা অপচয় করে।

মনে হতে পারে যে, আমরা আরও সময় পাব, আমরা যে কাজগুলো করতে চাই তার জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু অপেক্ষা পরিণত হয় বছরে, আর বছর পরিণত হয় অনুশোচনায়। সত্যটি হল, আপনি আজ কীভাবে সময় কাটাতে চান তার উপর নির্ভর করে ৬০ এ আপনার জীবন কেমন হবে।

এর অর্থ সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া- যা আসলে আপনাকে আনন্দিত করে তাতে হ্যাঁ বলা এবং যা আপনাকে নিঃশেষ করে তাতে না বলা। আপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন বাধ্যবাধকতা গুলো ছেড়ে দেওয়া।

৬) “সঠিক সময়ের” জন্য অপেক্ষা করা বন্ধ করুন

অপেক্ষা করার সবসময়ই কারণ থাকে। কিন্তু অপেক্ষায় জীবন থেমে থাকে না। বছর চলতে থাকে এবং আপনি যে জিনিসগুলো “একদিন” করবেন বলে শপথ করেছিলেন সেগুলি অপূর্ণ থেকে যায়।

সত্যি কথা বলতে, সঠিক সময় বলতে কিছু নেই। এখনই আছে। আপনার কাছে যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ হয় তা শুরু করার সেরা সময় আজই। যেমন: একটি নতুন দক্ষতা শেখা, আপনার পছন্দের জীবন গড়ে তোলা, এমন একটি ঝুঁকি নেওয়া যা আপনাকে আনন্দ দেয়।

কারণ আপনি যত বেশি অপেক্ষা করবেন, ততই সুযোগ হারাবেন।

৭) পরিবর্তনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে শিখুন

কোনো কিছুই চিরকাল একই রকম থাকে না। বন্ধুত্ব বদলে যায়, অগ্রাধিকার বদলে যায়, যে জিনিসগুলো একসময় নিশ্চিত বলে মনে হয়েছিল তা হঠাৎ হয় না।

তবুও, অনেকে পরিবর্তনের বিরোধিতা করে, যা পরিচিত তা আঁকড়ে ধরে থাকে। অতীতকে ধরে রাখা নয়, বরং মানিয়ে নেওয়া, বেড়ে ওঠা এবং নতুন অভিজ্ঞতার জন্য জায়গা তৈরি করাই আপনাকে সুখী করতে পারে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে যারা সবচেয়ে সুখী থাকে তারা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করে না, তারা এটাকেই আলিঙ্গন করে। আপনি যদি সবকিছু একই রাখার চেষ্টা করতে আপনার সমস্ত শক্তি ব্যয় করেন, তবে আপনি নতুন সমস্ত কিছু মিস করবেন, যা আসলে আপনাকে খুশি করতে পারে।

৮) সাফল্যের সংজ্ঞা দিন

বছরের পর বছর ধরে, আমাদের বলা হয় যে সাফল্য কেমন হওয়া উচিত- ক্যারিয়ারের সিঁড়ি আরোহণ, নির্দিষ্ট সম্পদের মালিকানা, মাইলফলকে পৌঁছানো যা প্রমাণ করে যে আমরা সফল।

তবে আপনি যখন এই সবকিছু অর্জন করেন, এখনও শূন্যতা অনুভব করতে পারেন। সত্যিকারের সুখ অন্য কারও সাফল্যের সংস্করণ থেকে আসে না। এটি আসলে আপনার কাছে কী গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা এবং তার ভিত্তিতে একটি জীবন তৈরি করা থেকে আসে।

আপনি যদি সিদ্ধান্ত না নেন যে; আপনার জন্য সাফল্য কেমন হবে, তবে জীবনই আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেবে। আপনি যখন আপনার ৬০ এ পৌঁছান, আপনি বুঝতে পারেন যে আপনি কয়েক দশক ধরে এমন কিছু তাড়া করেছেন যা আপনার উদ্দেশ্য ছিল না।