আজ সোমবার সকাল ১০:২৯, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
লিবিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব মরুভূমিতে দুটি গণকবর থেকে অন্তত ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো অভিবাসন ও শরণার্থীদের, যারা বিশৃঙ্খলা-কবলিত উত্তর আফ্রিকার দেশটি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দেশটির নিরাপত্তা অধিদপ্তর এক বিবৃতিতে এ খবর জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ-পূর্ব দিকের কুফরা শহরের মরুভূমিতে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই গণকবর থেকে ১৯ অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।
কুফরার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আল-ফাদিল বলেন, কর্তৃপক্ষগুলো শহরটির একটি বন্দিশিবিরে অভিযান চালালে সেখানে আরও একটি গণকবর পাওয়া যায়। এই কবর থেকে অন্তত ৩০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, এই গণকবরে প্রায় ৭০ ব্যক্তিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ গণকবরটিতে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।
পূর্ব ও দক্ষিণ লিবিয়ার অভিবাসীদের সাহায্যকারী দাতব্য সংস্থা আল-আবরীন জানিয়েছে, গণকবরে দাফন করার আগে কিছু লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কুফরার নিরাপত্তা চেম্বারের প্রধান মোহাম্মদ আল-ফাদিলের মতে, একটি মানব পাচার কেন্দ্রে অভিযান চালানোর পর কুফরায় কমপক্ষে ৩০টি মৃতদেহসহ একটি পৃথক গণকবরও পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, জীবিতরা জানিয়েছেন কবরে প্রায় ৭০ জনকে সমাহিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এখনও ওই এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে।
লিবিয়ায় অভিবাসীদের গণকবর পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। গত বছর, কর্তৃপক্ষ রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ৩৫০ কিলোমিটার (২২০ মাইল) দক্ষিণে শুয়ারিফ অঞ্চলে কমপক্ষে ৬৫ জন অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী অভিবাসীদের জন্য লিবিয়া একটি প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট। ২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহের পর দেশটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। দীর্ঘকালীন স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন ও হত্যার পর দেশটি বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়। তেল সমৃদ্ধ লিবিয়া গত দশকের বেশিরভাগ সময় ধরে পূর্ব এবং পশ্চিম লিবিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার শাসন করছে। প্রতিটি সরকারই মিলিশিয়া এবং বিদেশি সরকারগুলির একটি গোষ্ঠী সমর্থিত।
মানব পাচারকারীরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অস্থিতিশীলতার সুবিধা পেয়েছে। চাদ, নাইজার, সুদান, মিশর, আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়াসহ ছয়টি দেশের সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসীদের পাচার করছে তারা।
একবার উপকূলে পৌঁছানোর পর পাচারকারীরা ইউরোপে উন্নত জীবনের জন্য মরিয়া অভিবাসীদের ভঙ্গুর রাবারের নৌকা এবং অন্যান্য জাহাজে করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভূমধ্যসাগরীয় পথে পাঠায়।
মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলি বছরের পর বছর ধরে লিবিয়ায় অভিবাসীদের উপর জোরপূর্বক শ্রম, মারধর, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের মতো পদ্ধতিগত নির্যাতনের নথিভুক্ত করেছে। পাচারকারীদের নৌকায় করে লিবিয়া ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আগে প্রায়ই নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়।