আজ সোমবার ভোর ৫:৩৫, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

জুলাই আন্দোলন দমনে ‘সমন্বয়ের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী’

নিউজ ডেস্ক |দুরন্ত নিউজ .কম
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫ , ৭:৩০ অপরাহ্ণ
ক্যাটাগরি : অপরাধ

বাংলাদেশে গত জুলাই-অগাস্টে প্রায় ১৪০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের নির্দেশেই বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে।

“আরও হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়া পুলিশ ও র‍্যাবের তথ্য অনুযায়ী ১১ হাজার ৭০০ জনকে তখন আটক করা হয়েছিলো। যারা নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা শিশুরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছে ও পঙ্গু হয়েছে,” সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রের সাথে অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া প্রমাণগুলোর সমন্বয় করে ওএইচসিএইচআর-এর ওই প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তখন পদ্ধতিগত ও সংগঠিতভাবে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অংশ হয়ে ওঠেছিলো।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর আরও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরামর্শ দিয়েছে ওএইচসিএইচআর।

একই সঙ্গে সংস্থাটি রাজনৈতিক দলকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এতে র‍্যাব বিলুপ্ত করা এবং সামরিক বাহিনীর কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সময় দুপুরে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে ওএইচসিএইচআর বাংলাদেশে এসে ওই তদন্ত করেছিলো।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের এই রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যারা আইন ভঙ্গ করেছেন এবং মানুষের মানবিক ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করেছেন, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এই রিপোর্টে ইউনূস সরকারের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে। কারণ পাঁচই অগাস্টের পর থেকে দেশে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের কোনো পরিবেশই নেই।

“তখন সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলা করে দেশ ও জনগণের জানমাল ও সম্পদ রক্ষার জন্য আইনি পন্থা অবলম্বন করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সিনিয়র কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে রিপোর্টে মনগড়া তথ্য দেয়া হয়েছে। কারণ এখন কোনো কর্মকর্তার পক্ষে সরকারের বাইরে গিয়ে সত্যি তথ্য দেয়ার সুযোগ নেই,” তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন তিনি।

যদিও মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলেছেন, বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে যেভাবে আইন বহির্ভূত যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো সেটি ওএইচসিএইচআর-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এবং তখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের এ দায় অস্বীকারের কোনো সুযোগই নেই বলে তিনি মনে করেন।

প্রসঙ্গত, জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের সময় ৮২৬ জন নিহত ও ১১১ হাজার ৩০৬ জন আহতের একটি তালিকা সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই সাবেক সরকারের অন্তত ৮০ জন সাবেক মন্ত্রী ও এমপিকে আটক করা হয়েছে।