আজ সোমবার দুপুর ২:০৭, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে। কোনোটি টিকে আছে, কোনোটি হারিয়ে গেছে। এই দলগুলোর কোনোটি ডান, কোনোটি বামপন্থী আদর্শের। কোনো দল জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দেয়, আবার কোনোটি ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক আদর্শকে সামনে রেখে এগিয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্ররা। নতুন দল গঠনের এই কাজটি তত্ত্বাবধান করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রদের এই নতুন দলের আদর্শ কী হবে?
ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে বামপন্থী কিংবা ডানপন্থী রাজনীতির যে ধারা, ছাত্রদের নতুন দল যেন সেটার কোনোটির মধ্যেই না থাকে। এই অবস্থানকে তারা বলছেন মধ্যপন্থী অবস্থান।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা একটা মধ্যমপন্থী রাজনীতির কথা বলছি। আমরা বাম-ডান এমন যে বিভাজন আছে সেগুলোতে ঢুকতে চাই না। আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি অথবা উগ্র ইসলামপন্থী বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই।
’
এক্ষেত্রে দলটি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার বা ধর্মভিত্তিক এ ধরনের কোনো আদর্শকেই সামনে রাখতে চায় না। জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা এখানে সাম্য, ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের কথা বলছি। এটাকেই হাইলাইট করতে চাই। একইসঙ্গে একটা রাষ্ট্রে যে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে, সেই বহুত্ববাদকে স্বীকার করেই কীভাবে একটা এগ্রিমেন্টের মধ্য দিয়ে এগোনো যায় যেভাবে আমরা অভ্যুত্থানে এগিয়েছি, সেইটা হচ্ছে আমাদের মূল ফোকাস পয়েন্ট।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ডানের দিকেও ঝুঁকবো না, বামের দিকেও ঝুঁকবো না।
সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসনকে ঘিরে আমরা হবো একটা মধ্যপন্থী দল যেন আমরা সব ধরনের মানুষকে ধারণ করতে পারি।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাঙালি কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি যেমন আছে, তেমনি ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও আছে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে দলীয় প্রচার এবং কৌশলে অনেকসময়ই ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে এক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক– এরকম কোনো পরিচয়ে ঢুকতে চায় না ছাত্রদের সম্ভাব্য নতুন দল।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমরা অধিকারের রাজনীতি, দায় ও দরদের রাজনীতি এগুলোকে সামনে নিয়ে আসবো যাতে এখানে নির্দিষ্ট কোনো মত বা ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে না ওঠে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে শুধু বাংলাদেশ, এই দেশের মানুষের অধিকার এবং রাষ্ট্র গঠনের কাজ। এখানে যে কোনো ধর্মের মানুষ, যে কোনো মতের মানুষ, যে কোনো আদর্শের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে।’
সফল হতে এরদোয়ান, ইমরান খান, কেজরিওয়ালে নজর
আদর্শ যেটাই হোক, ছাত্রদের নতুন দল কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবে সেটা আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। তবে এটাও ঠিক দেশটিতে গত ৪০ বছরে নতুন তৈরি হওয়া কোনো দল ভোটের মাঠে সেভাবে সুবিধা করতে পারেনি। তবে দেশে না হলেও গত কয়েক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষমতায় আসার নজীর আছে।
যার মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে নজর কেড়েছে তুরস্কের রিচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি, পাকিস্তানের ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি।
সফলতার মন্ত্র খুঁজতে ছাত্ররাও নতুন এই তিনটি দলের কর্মসূচি, সাংগঠনিক কাঠামো ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করছে। এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এসব দল কীভাবে জনগণের কাছে জনপ্রিয় হতে পেরেছে সেগুলো খতিয়ে দেখছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘এই পার্টিগুলো আসলে কীভাবে জনগণের কাছে গিয়েছে, জনগণের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে তারা কোন ধরনের কৌশল নিয়েছে, তাদের গঠনতান্ত্রিক কাঠামোটা কেমন -এসব বিষয় আমরা স্টাডি করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বোঝার চেষ্টা করছি ওই অঞ্চলের তরুণদের বোঝার ক্ষেত্রে এবং রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে তারা কী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এসেছে যেটা ওই দেশের লোকজন গ্রহণ করেছে এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে শাসনক্ষমতার দায়িত্ব দিয়েছে। এখানে দেখবেন এরদেয়ানের পার্টি কিন্তু ফোকাস করেছে ইনসাফের ওপর। তার নামই হচ্ছে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। যেটা আমরাও বলছি।’
আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচারের কথা বলছি, সুশাসনের কথা বলছি। অন্যদিকে ভারতের আম আদমি পার্টি দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করেছে। দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম করেছে। আমরা সেগুলোও দেখছি।’