আজ সোমবার ভোর ৫:২৬, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

রেফারিং নিয়ে ফের বিতর্ক, তবে জিতে দুই মাদ্রিদকে টপকে শীর্ষে বার্সেলোনা

নিউজ ডেস্ক |দুরন্ত নিউজ .কম
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ , ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ
ক্যাটাগরি : খেলা

রেফারিদের আলোচনার কেন্দ্রে রেখে একটি সপ্তাহ শেষ করল লা লিগা। প্রথমে রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচে বিতর্কিত লাল কার্ড দেওয়া ও রিয়ালের জয়বঞ্চিত থাকা, এরপর আতলেতিকো মাদ্রিদ ম্যাচে শুরুতেই লাল কার্ড দেওয়ায় দশজন নিয়ে খেলে তাদের কোনোমতে হার এড়ানোর মতো ঘটনার পর রায়ো ভায়েকানোর একটি গোল অফসাইডে বাতিল করে বার্সেলোনার ড্রয়ের সম্ভাবনাকে জয়ে পরিণত করার মধ্য দিয়ে শেষ হলো সপ্তাহ।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বার্সেলোনার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ১-০ গোলে হেরেছে রায়ো ভায়েকানো।

পেনাল্টি থেকে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করে এদিন বার্সাকে জিতিয়েছেন রবের্ট লেভানডোভস্কি।

এই জয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ তিন স্থান ওলট-পালট হয়ে গেছে।

লিগের ২৪তম রাউন্ডে মাদ্রিদের দুই দল ড্র করে দুই পয়েন্ট করে হারানোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিন নম্বর থেকে ফের পয়েন্ট টেবিলের চূড়ায় উঠে গেছে বার্সেলোনা।

 

২৪ ম্যাচে ১৬ জয় ও ৩ ড্রয়ে দলটির পয়েন্ট ৫১। সমান ম্যাচে ১৫ জয় ও ৬ ড্রয়ে সমান পয়েন্ট নিয়েও বার্সার চেয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় শীর্ষস্থান থেকে দুইয়ে নেমে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আর ১৪ জয় ও ৮ ড্রয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে দুই থেকে তিনে অবনমন হয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদের।

এতে করে লিগের শীর্ষ তিন দলের পয়েন্ট ব্যবধান ৩ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১-এ। ফলে মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে এসে জমে গেছে শিরোপার লড়াই।

এদিন একটির বেশি গোল করতে না পারলেও ম্যাচে পরিষ্কার ফেবারিট ছিল কাতালানরাই। ম্যাচজুড়ে ৬০ শতাংশ সময় বলের দখল রেখে গোলের উদ্দেশে মোট ১৪টি শট নিয়ে তার পাঁচটি লক্ষ্যে রাখে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। অপরদিকে, রায়োর আটটি শটের চারটি লক্ষ্যে ছিল।

রেফারিং নিয়ে ফের বিতর্ক, তবে জিতে দুই মাদ্রিদকে টপকে শীর্ষে বার্সেলোনা
এক গোলের ছোট্ট ব্যবধানে জিতলেও রিয়াল মাদ্রিদকে হটিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠতে তা-ই যথেষ্ট ছিল বার্সেলোনার।

ম্যাচের শুরু থেকেই এদিন আক্রমণের পসরা মেলে বার্সেলোনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ মিনিটেই গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। তবে রাফিনিয়ার ক্রসে হেড দিয়েও লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন লেভানডোভস্কি।

অষ্টম মিনিটে রাফিনিয়ার হেডার একই কায়দায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চার মিনিট পর লামিন ইয়ামালের শট রায়োর ডিফেন্সে কাটা পড়ে।

শুরুর ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরতে শুরু করে সফরকারীরা। চতুর্দশ মিনিটে তো গোল করার দারুণ একটি সুযোগও তৈরি করে ফেলেছিল তারা, তবে ইসি পালাসিওনের ক্রসে আব্দুল মুমিন ছয় গজ বক্সের ভেতর থেকে হেড দিলেও অল্পের জন্য তা পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।

২০তম মিনিটে চকিতে পাল্টা আক্রমণে উঠে বক্সের কিছুটা আগে রাফিনিয়াকে থ্রু বল বাড়ান আলেহান্দ্রো বালদে। তবে শেষমেষ রাফিনিয়া তা গোলে পরিণত করতে ব্যর্থ হন। তিন মিনিট পর এই ব্রাজিলীয় উইঙ্গারের আরও একটি শট ঠেকিয়ে দেন রায়ো গোলরক্ষক আউগুস্তো বাতায়া।

তবে ২৮তম মিনিটে বার্সেলোনাকে আর আটকে রাখতে পারেনি সফরকারীরা।

ঘটনাটি অবশ্য ঘটে রাফিনিয়ার শট সেভ করার পরের মিনিটেই। বক্সের ভেতর বার্সার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় বল নিয়ে ঢুকে পড়লে ইনিগো মার্তিনেসকে ফেলে দেন রায়ো ডিফেন্ডার পাথে সিস, আর পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পরে তা থেকে গোল আদায় করে দলকে এগিয়ে নেন লেভানডোভস্কি।

এই গোলে চলতি মৌসুমে লা লিগায় তার গোলসংখ্যা হলো ২০টি। আর গোল ও অ্যাসিস্ট মিলিয়ে সব প্রতিযোগিতায় মোট ৩৪ ম্যাচে ৩৫ গোলে অবদান রাখলেন এই পোলিশ তারকা।

চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার পাওয়া চারটি পোনাল্টিতেই শট নিয়ে তিনবার সফল লেভানডোভস্কি। ছবি: এফসি বার্সেলোনা
৩১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারত বার্সেলোনা, তবে লামিনের শট ঠেকিয়ে দেন রায়োর আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক।

৩৭তম মিনিটে ভয়চিয়েখ স্টান্সনির চমৎকার ডবল সেভ দেখে দর্শক। প্রথমে রায়ো স্ট্রাইকার রান্ডি এনতেকার নিচু শট বার্সেলোনার এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করলেও মুহূর্তের মধ্যে নিজের ভারসাম্য ঠিক করে ঝাঁপিয়ে তা ফিরিয়ে দেন এই পোলিশ গোলরক্ষক। এরপর বল কিছুটা ডানে গোললাইনের কাছাকাছি এগোতে থাকলে পেয়ে যান আলভারো গার্সিয়া। তবে তিনি শট নেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ফের বলের সামনে নিজের শরীর ফেলে দেন স্টান্সনি। ফলে সে যাত্রায় রক্ষা পায় বার্সেলোনা।

প্রথমার্ধের শেষের দশ মিনিটের আরও কয়েকটি ভালো আক্রমণে ওঠে রায়োর খেলোয়াড়রা। এর মধ্যে ৪৩তম মিনিটে হোর্হে দে ফ্রুতোসের গোলে সমতায়ও ফেরে দলটি, কিন্তু রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালে হতাশ হয় তারা।

ভিএআর রিপ্লেতে দেখা যায়, বার্সেলোনার ডি-বক্সের মধ্যে সতীর্থের পাস যখন ঢুকছে, তখন দে ফ্রুতোস অফসাইডে ছিলেন না, ছিলেন এনতেকা। এ সময় এনতেকা বল ধরার কোনো প্রচেষ্টাও করেননি, তবে দে ফ্রুতোসকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যাওয়া ইনিগো মার্তিনেসের পথরোধ করেন তিনি। ফলে সেটিকেই খেলায় অংশ নেওয়া ধরে অফসাইড বহাল রাখে ভিএআর; আর হতাশা নিয়েই বিরতিতে যেতে হয় রায়ো ভায়েকানোর ফুটবলারদের।

দে ফ্রুতোস বল ধরার মুহূর্তে ইনিগো মার্তিনেসকে আটকাতে দেখা যায় এনতেকাকে। ছবি: সিবিএস স্পোর্টস টেলিভিশনের সৌজন্যে

প্রথমার্ধের শেষ দিকের জড়তা কাটিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ফের আক্রমণ শুরু করে বার্সেলোনা। এরই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের ৫৩তম মিনিটে অসাধারণ নৈপুণ্যে ডান পাশ দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলমুখে লেভানডোভস্কির উদ্দেশে পাস বাড়ান পেদ্রি। তবে লেভার শটটি অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

এর পর থেকে অবশ্য ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে যায় বার্সেলোনা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমতায় ফেরার চেষ্টা করে রায়ো।

৬৭তম মিনিটে ভালো একটি আক্রমণে উঠে বক্সের ভেতর থেকে জোরালো শট নেন দে ফ্রুতোস, তবে আবারও বার্সার ত্রাতা হয়ে তা ঠেকিয়ে দেন স্টান্সনি। এর মিনিট দেড়েক পর রায়োর আরও একটি আক্রমণ প্রতিহত করেন তিনি।

৬৬তম মিনিটে বার্সার রক্ষণের ডান উইংয়ে ভুগতে থাকা হেক্তর ফোর্তকে উঠিয়ে জুল কুন্দে এবং মাঝমাঠ থেকে গাভিকে উঠিয়ে দানি অলমোকে নামান ফ্লিক।

এই অলমোর পা থেকেই ৭১তম মিনিটে ব্যববধান বাড়িয়ে নিতে পারত বার্সেলোনা, তবে শেষ মুহূর্তে তাকে ফেলে দেন রায়ো গোলরক্ষক। খালি চোখে রিপ্লেতে সেটি পরিষ্কার ফাউল দেখা যায়, ধারাভাষ্যকারদের মতও ছিল তাই; কিন্তু এবার রেফারি পেনাল্টি তো দেননিই, এমনকি ভিএআরের সহায়তা নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি তিনি।

এক মিনিট পর রাফিনিয়াও রায়োর বক্সের ভেতরে ঢুকে বিপরীত পাশ দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করলে তাকে ফেলে দেন গোলরক্ষক। রেফারি এবার রিভিউ নেন, তবে তা তা ফাউল ছিল না।

বার্সেলোনার জার্সিতে মাঠে নেমে এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচে (১০) অপরাজিত রইলেন স্টান্সনি। এছাড়া সবশেষ চার ম্যাচের তিনটিতে জাল অক্ষত রেখেছেন অবসর ভেঙে ফেরা এই গোলরক্ষক। ছবি: এফসি বার্সেলোনা

৭৬তম মিনিটে আরও একবার গোলের সুযোগ তৈরি করেন আলভারো গার্সিয়া, তবে শেষ মুহূর্তে তার শট পোস্টের বেশ উপর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটে বালদে-লেভার প্রচেষ্টা রুখে দেন রায়োর ডিফেন্ডাররা।

৮০তম মিনিটে অলমোর আরও একটি প্রচেষ্টা রায়ো গোলরক্ষক আউগুস্তো বাতায়ার নৈপুণ্যে বিফলে যায়। দেড় মিনিট পর রাফিনিয়ার আরও একটি প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দেন তিনি।

নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণে উঠে গোল পেয়েই গিয়েছিল রায়ো, তবে সতীর্থের জোরালো ক্রসে হেড দিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে গিয়ে তা ক্রসবারের উপর দিয়ে বের করে দেন দে ফ্রুতোস।

শেষের কয়েক মুহূর্তে ভীষণ আক্রমণাত্মক হয়ে সমতায় ফেরার মরিয়া চেষ্টা চালায় রায়ো, তবে গোল আর পাওয়া না হয়ে উঠলে ১-০ গোলের ব্যবধান ধরে রেখেই মাঠ ছাড়ে কাতালানরা।

এর ফলে নতুন বছরে বার্সেলোনার অপরাজিত যাত্রা অব্যাহত রইল (১০ জয়, ২ ড্র)। এই সময়ে দলটি ১২ গোল খাওয়ার বিপরীতে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছে ৪১ বার।