আজ সোমবার রাত ২:০৭, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। উপহার দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় গান। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বরাবরই রেকর্ডিং আর স্টেজ শো সমানতালে চালিয়ে গেছেন। শুধু দেশে নয়, মাতিয়েছেন বিদেশের অনেক বড় বড় মঞ্চ।
এবারের বইমেলায় লেখক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। বইমেলায় তার প্রথম বই ‘ফাহমিদা নবীর ডায়েরি’ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ভালোবাসা দিবসে এসেছে তার জনপ্রিয় গান ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’র সিক্যুয়াল। সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।
১৮ বছর পর ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’র সিক্যুয়াল এলো। এত দেরি হওয়ার কারণ কী?
জীবনের অলিগলি খুঁজতে একটু সময় তো লাগে। জীবনের এই সময়ে এসে অনুভূতিরও পরিবর্তন ঘটে। ভালো লাগা মন্দ লাগারও বিষয় থাকে।
আমরা আসলে ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’র পর এর সিক্যুয়াল ‘লুকোচুরি অলিগলি’ খুঁজছিলাম। সেটা খুঁজতে খুঁজতে ১৮ বছর পার করে ফেললাম। কখন যে সময়টা পার হয়ে গেল, বুঝতেই পারিনি।
প্রথম গানটির পেছনের গল্প শুনতে চাই…
২০০৫ সালের কথা। এনামুল করিম নির্ঝর আমাকে ফোন করলেন।
‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ গানটি পাঠালেন। বললেন, আমাকে গানটি গাইতে হবে। শুনলাম, প্রথমবারেই একটু অবাক লাগল। নির্ঝর বললেন, সিনেমার গান। সাধারণত সিনেমার গান বলতে যেমন বোঝায় এই গানটির কথা ও সুর তেমন নয়। একটু অন্য রকমের। আমার খুব ভালো লাগল। কণ্ঠে তুললাম। এরপর এক বছর কেটে গেল। নির্ঝরের আর খোঁজ নেই। ভাবলাম, গানটা হবে না। হঠাৎ ২০০৬ সালের দিকে ফোন, নির্ঝর জানালেন সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র ঢাকায় এসেছেন। ফোয়াদ নাসের বাবু ভাইয়ের স্টুডিওতে গানটির রেকর্ডিং। সেগুনবাগিচার সেই স্টুডিওতে গেলাম। বাবু ভাই রেকর্ডিংয়ের সময় মিটিমিটি হাসছিলেন। বুঝলাম, ভালো গেয়েছি।
সেই বছরই এফএম রেডিও চ্যানেল ‘রেডিও টুডে’র যাত্রা। দেখলাম সকাল নেই, বিকেল নেই এই গানটিই তারা বাজাচ্ছে। ধীরে ধীরে দেখলাম আশপাশের মানুষও গানটি গুনগুন করছে। পরের বছর ছবি ‘আহা!’ মুক্তি পেল। এরপর তো গানটি আরো ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হলো। পরের বছর ‘ক্লোজআপ ওয়ান’-এর শুটিংয়ে, হঠাৎ দেখি টিভির স্ক্রলে আমার নাম, গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। খুব আনন্দ হলো।
গানটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে এই গানের শিরোনামে দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটকও নির্মিত হয়েছিল। সিক্যুয়ালটি কি সেই সীমা ছুঁতে পারবে?
এটা বলা কঠিন। আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। গানটি করতে আমাদের ১৮ বছর লেগে গেল। তার মানে একবার ভাবুন, সিক্যুয়ালটি করতে কতবার চেষ্টা করেছি! নির্ঝর লিখেছেন, ছিঁড়ে ফেলেছেন, দেবজ্যোতি দাদা সুর করেছেন, পরিবর্তন করেছেন। প্রচারেই প্রসার। এখন সিক্যুয়ালটি প্রচার করতে হবে। তাহলে দর্শকের কাছে পৌঁছবে। এখন পর্যন্ত যাঁরা শুনেছে সবাই পছন্দ করেছেন। অনেকে আমাকে বলেছেন, ‘আপু, অস্থির সময়ে একটা স্বস্তির গান শুনলাম।’ অনেকে বলেছেন, ‘চোখ বুজে গানটি শোনার পর এক রকম তৃপ্তি লাগে।’ এ রকম নানা ধরনের অভিব্যক্তি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
‘ফাহমিদা নবী’র ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
দারুণ। এককথায় অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছে। কভিডের সময় থেকে ডায়েরিটা নিয়মিত লিখি। আমার একটা ফেসবুক পেজ আছে, সেখানেই লেখাগুলো প্রকাশ করতাম। বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল অনুরোধ করলেন সেখানে কলাম লিখতে। সেটাও দেখলাম পাঠক পছন্দ করছে। এরপর অনেক প্রকাশক যোগাযোগ করেছেন লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ করতে। তবে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। তবে এ বছর জানুয়ারিতে কাছের এক সাংবাদিক পুরো পাণ্ডুলিপি নিয়ে বাসায় হাজির। বললেন, ‘আপা, আপনি সম্পাদনা করে দেন, প্রচ্ছদ কী হবে সেটার ধারণা দেন।’ আসলে আমাকে কেউ থামতেই দেয়নি। সবাই ভালোবেসে লেখক বানিয়ে ছাড়লেন।
বইমেলায় নিয়মিত যাচ্ছেন?
প্রায়ই তো যাচ্ছি। একটু পরেই (গতকাল) রওনা দেব। ১৯ ফেব্রুয়ারিতেও যাওয়ার কথা রয়েছে। আসলে পাঠকদের সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানতে ভালো লাগে। অটোগ্রাফ দেওয়ার পর অনেকে বলেন, আমি খুব বিনয়ী। তাঁদের বলি, দুই দিনের দুনিয়া। বিনয়ী না হয়ে উপায় কী!
প্রায় চার যুগের গানের ক্যারিয়ার আপনার। পাওয়া না পাওয়া নিয়ে যদি বলতেন…
প্রত্যেকের মধ্যেই অতৃপ্তি থাকে। সবাইকে অতৃপ্তি নিয়েই যেতে হবে। যখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সিনেমার গানে নিয়মিত ডাক পাব। কিন্তু হলো উল্টোটা। একদমই ডাক পেতাম না। তাই বলে কি থেমে যাব? আমি থেমে যাওয়ার মানুষ নই। অডিওতে নিয়মিত কাজ করে গেলাম। পাওয়ার চেয়ে প্রত্যেকটা মানুষের না পাওয়ার পাল্লাটাই ভারী হয়। তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। এমন কিছু রেখে যেতে হবে যেটা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সম্পদ হয়ে থাকবে।
যুগে যুগে গানের ধরন, প্রকাশের প্ল্যাটফর্মসহ নানা পরিবর্তন এসেছে। নিজেকে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন কিভাবে?
আমি ভীষণ পজিটিভ মানুষ। ২০০৬ সালের কথা, রবীন্দ্রসরোবরে ‘এক মুঠো গান’ গান গাওয়ার সময় শ্রোতারা প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মেরেছিল। তবে আমি একরোখা, গানটি গেয়েই তারপর স্টেজ ছেড়েছিলাম। দেখেন, মাত্র সাত-আট মাসের ব্যবধানে ‘এক মুঠো গান’-এর পুরো অ্যালবামটাই শ্রোতারা লুফে নিয়েছিল। এখন তো টিকটকের যুগ। আমি টিকটক করলে কি শ্রোতারা মেনে নেবে? অবশ্যই না। তারা আমাকে শাড়ি পরে গান পরিবেশন না করলে শুনবেই না। এমনও হয়েছে, কোনো শুটিংয়ে গিয়েছি, ফুল নিতে ভুলে গিয়েছি। শুটিং স্পট থেকেই ওরা জোগাড় করেছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, আমাকে নাকি ফুল ছাড়া মানায় না। তার মানে আমি নিজের একটা স্বতন্ত্র সত্তা তৈরি করতে পেরেছি। যতই গানের ধরন বদলাক, প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম বদলাক, নিজের স্বকীয়তা থাকলে টিকে থাকা যাবে।