আজ সোমবার রাত ৪:৩৬, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

বোতলজাত সয়াবিন উধাওয়ের পথে

নিউজ ডেস্ক |দুরন্ত নিউজ .কম
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫ , ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ
ক্যাটাগরি : বাণিজ্য

চট্টগ্রাম নগরের বড় বাজারগুলোর একটি বহদ্দারহাট। সেই বাজারে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে অন্তত ৩০টি দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। গতকাল শনিবার এসব দোকান ঘুরে শুধু একটিতে সয়াবিন তেল পাওয়া গেল। তা–ও দুটি পাঁচ লিটারের বোতল।

ঢাকার চিত্র মোটামুটি একই। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে সব মুদিদোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়, সেখানে এখন সয়াবিন তেল খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। বড় দোকান থেকে পাঁচ লিটারের বোতল নিলে সাধারণত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) থেকে কিছুটা ছাড় পাওয়া যেত। এখন দিতে হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি। অনেক ক্ষেত্রে তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছেন দোকানদার। অন্যদিকে বাড়তি চাহিদার সুযোগে খোলা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং কাঁচাবাজার থেকে গতকাল দুপুরে পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল কিনতে যান মাহফুজুর রহমান। তিনি  বলেন, দোকানদার তাঁকে যে ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল দিচ্ছিলেন, সেই ব্র্যান্ডের তিন কেজি সুগন্ধি চালও নিতে হবে বলে শর্ত দেন। তিনি তেল নেননি।

সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন, যা গত এক বছরে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানির রেকর্ড নেই।

সংসারে অতি জরুরি নিত্যপণ্যের একটি ভোজ্যতেল। নগরের বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনেন। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। দেশীয় বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও বীজ আমদানি করে তা থেকে তেল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন, যা গত এক বছরে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানির রেকর্ড নেই।

তারপরও কেন বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, জানতে চাইলে ভোজ্যতেল সরবরাহকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছি। প্রতিদিন যা সরবরাহ করছি, তা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও মনিটরিং সেলকে জানাচ্ছি। কিন্তু সরবরাহ সংকট কেন, তা বলতে পারব না।’

ভোজ্যতেলের বাজারের আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপমহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার  বলেন, শীতের শেষ দিকে সয়াবিন তেলের চাহিদা কমার কথা। এখন তো সরবরাহে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

ভোজ্যতেলের বাজারে আটটির মতো আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সক্রিয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সবার সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। অনেকেরই ঘাটতি আছে বলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যরা তার সুযোগ দিচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ট্যারিফ কমিশন কোম্পানিগুলোর কাছে সরবরাহের তথ্য চেয়েছে। শিগগিরই তাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। বাণিজ্যসচিবের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান গতকাল রাতে  বলেন, বোতলজাত তেলের সরবরাহ সংকটের বিষয়টি তাঁদের জানা। আজ রোববার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

আমরা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছি। প্রতিদিন যা সরবরাহ করছি, তা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও মনিটরিং সেলকে জানাচ্ছি। কিন্তু সরবরাহ সংকট কেন, তা বলতে পারব না।

অবশ্য বোতলজাত তেলের এই সংকট গত দু-চার দিনের নয়, গত প্রায় চার মাস ধরে চলছে। নভেম্বরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এরপর সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমায়। তারপরও সংকট না কাটায় গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৭৫ টাকা।

রাজধানীর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও হাতিরপুল বাজার এবং চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও খাতুনগঞ্জ বাজারে খোঁজ নিয়ে গতকাল জানা যায়, এসব বাজারের বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খোকন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, গতকাল তিনি পাইকারি দোকান থেকে পাঁচ লিটারের পাঁচটি বোতল কিনেছেন। এসব বোতলের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৮৫০ টাকা। তিনি কিনেছেন ৮৬০ টাকায় এবং বিক্রি করেছেন ৮৬৫-৮৭০ টাকা করে।

হুমায়ুন বলেন, ‘এখন শুধু পরিচিতদের কাছে বেশি দামে কেনা সয়াবিন তেল বিক্রি করি। না হলে ক্রেতাদের সঙ্গে বাড়তি দাম নিয়ে অযথা তর্ক হয়।’

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৬১ ডলারে, যা গত নভেম্বরের চেয়ে ১০০ ডলারের মতো কম। যদিও বাংলাদেশে দাম বাড়ছে। বোতলজাত তেল না থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম এক সপ্তাহে লিটারপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এ তথ্য জানিয়ে বলছে, এখন খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৮০-১৮২ টাকা।

ঢাকার মৌলভীবাজারের ভোজ্যতেলের পাইকারি বিক্রেতা আবুল হাশেম  বলেন, ‘কোম্পানিগুলো আমাদের জানিয়েছে, এক মাসের মধ্যে সরবরাহ ঠিক হবে। তবে রমজান মাস আসার আগে সংকট না কাটলে আমরা পরিস্থিতি কোনোভাবে সামাল দিতে পারব না।’

এখন শুধু পরিচিতদের কাছে বেশি দামে কেনা সয়াবিন তেল বিক্রি করি। না হলে ক্রেতাদের সঙ্গে বাড়তি দাম নিয়ে অযথা তর্ক হয়।