আজ সোমবার রাত ৪:৫৯, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

কর–ভ্যাট কমছে না, বিস্কুট–কেক, জুসের দাম বাড়তে পারে

নিউজ ডেস্ক |দুরন্ত নিউজ .কম
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫ , ১:১১ অপরাহ্ণ
ক্যাটাগরি : বাণিজ্য

বিস্কুট, কেক, জুস-ড্রিংকসহ এই জাতীয় সব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। গত মাসে এসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো এসব পণ্যের দাম বাড়ায়নি। বর্ধিত কর-ভ্যাট কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা, কিন্তু বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি।

আগামী বাজেটের আগে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার না করার কথা জানিয়েছে এনবিআর। এ কারণে এখন এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিস্কুট, কেক, জুস—এসব এখন প্রায় নিত্যব্যবহার্য পণ্যে পরিণত হয়েছে। সন্তানের টিফিন বক্সে এসব খাবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে। তাই দাম বাড়লে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তসহ সবার ওপর তার কমবেশি প্রভাব পড়বে।

এবার দেখা যাক, কোন পণ্যে কত বেশি শুল্ক-কর দিতে হবে। উৎপাদকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আগে ১০০ টাকার ফলের রসে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হতো। এতে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২৬ টাকা শুল্ক-কর দিতে হতো। এখন সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে শুল্ক-কর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ২৫ পয়সা, কর বাড়ল পৌনে ৬ টাকা।

একইভাবে ফ্লেভারড কার্বোনেটে ড্রিংকের ওপর দাম সবচেয়ে বেশি বাড়তে পারে। কারণ, এই পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে ১০০ টাকা দামের ড্রিংকে সাড়ে ১৯ টাকা শুল্ক-কর বেড়ে দাঁড়িয়ে সাড়ে ৪৯ টাকা হয়েছে। করের বোঝা বাড়ল সাড়ে ৩৪ টাকা। একইভাবে নন-ফ্লেভারড কার্বোনেট ড্রিংকের ওপর ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানোর ফলে ১০০ টাকার পণ্যে বাড়তি ১৭ টাকার বেশি শুল্ক-কর দিতে হবে। বাজারে এখন আম, লিচু, কমলা, লেবুসহ নানা ধরনের ফলের ফ্লেভারড ড্রিংক পাওয়া যায়।

আগে মেশিনে তৈরি ১০০ টাকার বিস্কুট ও কেকের ওপর ভ্যাট দিতে হতো ১০ টাকা। এখন দিতে হবে ১৫ টাকা। ফলে প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বাড়ল ৫ টাকা।

অন্যদিকে আচার, চাটনি, কেচাপ, পাল্প—এসব পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ১০০ টাকার পণ্যে খরচ বাড়বে ৫ থেকে ৯ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিস্কুট-কেক এখন আর বিলাস পণ্য নয়। এসব পণ্য মুটে-মজুরেরাও খায়। অনেক রিকশাওয়ালা কলা–পাউরুটি বিস্কুট খেয়ে ক্ষুধা দূর করেন। তাই এ ধরনের পণ্যে শুল্ক-কর বসানো উচিত নয়।

বিস্কুট, কেক, জুস, ড্রিংকের ওপর বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট কমানোর জন্য এক মাস ধরে দাবি করে আসছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও করেছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

ওই বৈঠক শেষে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাড়তি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হলে পণ্যের দাম বাড়বে। তিনি হতাশার সঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশ যত দামে বিস্কুট বিক্রি হয়, এত কম দামে আর কোথাও বিস্কুট বিক্রি হয় না। আমরা যুদ্ধ করছি, ৫ টাকার বিস্কুট যেন ৫ টাকায় বিক্রি করতে পারি। ১০ টাকা যেন নিতে না হয়।’

কোন দেশে কত ভ্যাট
জুস, ড্রিংক, বিস্কুট-কেক, আচার, চাটনি, কেচাপ ইত্যাদির ওপর ভ্যাটের হার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি। এসব পণ্যের ওপর বাংলাদেশে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ। কিন্তু থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এই হার যথাক্রমে ৭ ও ৮ শতাংশ। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার এসব পণ্যে কোনো ভ্যাট নেই।