আজ রবিবার রাত ৯:৫৪, ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
গত বছর চরম আকারের সৌরঝড় আমাদের গ্রহের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এর প্রভাবে আকস্মিকভাবে পরে দীর্ঘ সময়ের জন্য একজোড়া অতিরিক্ত ‘রেডিয়েশন বেল্ট’ (বিকিরণ বেল্ট) তৈরি হয়েছিল।
নাসা মহাকাশযানের তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, এমনটা আগে কখনও দেখা যায়নি।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে আমাদের গ্রহে ব্যাপক আকারের সৌরঝড় আছড়ে পড়ে। এতে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যাহত হয়। শুধু তাই নয়, এই ঝড়ের ফলে গত ৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত অরোরা দেখা গিয়েছিল। ভূ-চৌম্বকীয় গোলযোগের কারণে জিপিএস-নির্ভর যন্ত্রপাতিতেও ত্রুটি দেখা দেয়।
৬ ফেব্রুয়ারি ‘জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ: স্পেস ফিজিক্সে’ প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় গবেষকরা নাসার ‘কলোরাডো ইনার রেডিয়েশন বেল্ট এক্সপেরিমেন্ট’ (সিআইআরবিই) উপগ্রহের সংগৃহীত নতুন তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তারা আবিষ্কার করেছেন, ঝড়ের পরে আমাদের গ্রহের চারপাশে দুটি অস্থায়ী ‘বিকিরণ বেল্ট’-এর আবির্ভাব ঘটে।
গবেষকরা মনে করছেন, সৌর বিস্ফোরণ থেকে চার্জযুক্ত কণাগুলো পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে আটকা পড়লে এই বেল্ট তৈরি হয়। নতুন সৃষ্টি বেল্টগুলো ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেল্টের অনুরূপ দেখা গেছে।
ডোনাট-আকৃতির বিকিরণ বেল্টগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৫৮ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এগুলো আমাদের গ্রহকে সৌর বায়ু এবং মহাজাগতিক রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, নতুন দুটি বিকিরণ বেল্ট অভ্যন্তরীণ ভ্যান অ্যালেন বেল্ট এবং বাহ্যিক ভ্যান অ্যালেন বেল্টের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছিল।
গবেষকরা লিখেছেন, স্থায়ী কাঠামোর মতো বিকিরণ সৃষ্টি করা বেল্টের বাইরের অংশের বেশিরভাগজুড়ে ইলেকট্রন ছিল। এগুলো প্রায় আলোর গতিতে ঘুরছিল। আরেক অস্থায়ী বেল্টে আশ্চর্যজনক সংখ্যক প্রোটন রয়েছে, যা এর আগে অন্যান্য অস্থায়ী বিকিরণ বেল্টে দেখা যায়নি।
গবেষণার প্রধান লেখক কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ পদার্থবিদ এবং মহাকাশ প্রকৌশলী জিনলিন লি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা ঝড়ের আগে এবং পরের তথ্য তুলনা করে বলছিলাম, “বাহ, এটি সত্যিই নতুন কিছু। প্রোটন বেল্টের বহিরাকৃতি সত্যিই অত্যাশ্চর্য।”
আমাদের গ্রহে অস্থায়ী বিকিরণ বেল্ট নতুন কিছু নয়। বড় সৌর ঝড়ের পর চার্জযুক্ত কণাগুলো প্রায়শই কয়েক সপ্তাহের জন্য ভ্যান অ্যালেন বেল্টের মধ্যে অস্থায়ীভাবে আটকা পড়ে। তবে পৃথিবীর বিকিরণ ঢালে নতুন সৃষ্ট বেল্টগুলো সম্ভবত মে মাসের সৌরঝড়ের তীব্রতার কারণে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে টিকে আছে।
গবেষকরা লিখেছেন, ঝড়ের প্রায় তিন মাস পরে ইলেক্ট্রন বেল্ট অদৃশ্য হয়ে যায়। বিশেষ করে জুনে একটি বড় সৌর ঝড় এবং আগস্টে আরও একটি ঝড়ের পরে। অভ্যন্তরীণ প্রোটন বেল্ট অনেক বেশি স্থিতিস্থাপক প্রমাণিত হয়েছে এবং সম্ভবত এখনও রয়েছে।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স