আজ সোমবার রাত ১:৫৭, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চপাণ্ডব বলে যাদের বোঝানো হয়, তাদের মধ্যে এখন দুজন জাতীয় দলে রয়েছেন। বাকি দুই জনের গন্তব্য অনিশ্চিত এবং এক জন নিয়েছেন অবসর। তাতে মাঠের খেলায় অনেক আগেই পাঁচ তারকার এই জুটি ভেঙেছে। বর্তমানে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জাতীয় দলের জার্সিতে ওয়ানডে খেলছেন। দুই জনই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলার জন্য দেশ ছেড়েছেন। এই দুই তারকাও ক্যারিয়ার সায়হ্নে রয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই তাদের শেষ বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হতে পারে, সেই সম্ভাবনাই বেশি।
তামিম ইকবাল অবসর ঘোষণা করায় এই দলে তিনি নেই। আর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার খ্যাত সাকিব আল হাসানের খেলার কথা থাকলেও দুটি কারণে তিনিও। নেই দলের সঙ্গে। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর নিজ দেশেই ফিরতে পারেননি সাকিব, এরপর বোলিং অ্যাকশনে সমস্যা হওয়ায় নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন। সেজন্য তাকে দলে রাখা হয়নি। পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে বাকি থাকা মাশরাফী বিন মর্তুজা দশম বিপিএল থেকেই মাঠের খেলায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন। তারপর সেভাবে জাতীয় দলসহ কোনো টুর্নামেন্টেই খেলা হয়নি তার। সাকিবের মতো তিনিও রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের কারণে ‘পর্দার আড়ালে’ চলে গেছেন। তাতে দুই পাণ্ডবের ওপরই চোখ রয়েছে ভক্তদের।
বাংলাদেশের জার্সিতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিকুর রহিম খেলছেন টেস্ট ও ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিকে তিনিও বিদায় জানিয়েছেন। এবার পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চ থেকে অবসরের ঘোষণা এলে রিয়াদকে আর দেখা যাবে না বাংলাদেশের জার্সিতে। সেক্ষেত্রে মুশফিকের সামনে সম্ভাবনা রয়েছে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ে সিরিজ খেলে টেস্টকেও বিদায় জানানোর।
তবে সাদা পোশাকে তিনি খেলা চালিয়ে যাবেন কি না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণত ত্রিকেটাররা নিজ দেশের কোনো টুর্নামেন্ট থেকে অবসর নিতে চান। তবে সেটি না হলে অনেকেই বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট বেছে নেন অবসরের মঞ্চ হিসেবে। সাকিবও চেয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে অবসর নিতে। আবার তিনি দেশের মাটিতে টেস্ট খেলেও অবসর নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনোটিতেই ভাগ্য তার সহায় হয়নি।
মাহমুদউল্লাহর সামনে বৈশ্বিক মঞ্চ থেকে অবসরের সুযোগ রয়েছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। কিন্তু এই সিরিজে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি থাকলেও কেবল টেস্ট ম্যাচ রাখার গুঞ্জন রয়েছে। তাতে ঘরের মাটিতে ওয়ানডেতে অবসর নেওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারত সিরিজ রয়েছে। তিনটি সিরিজেই সফর করবে টাইগার বাহিনী। এরপর সেপ্টেম্বরের শেষে কিংবা অক্টোবরের শুরুতে রয়েছে এশিয়া কাপ। সে পর্যন্ত অবসরের অপেক্ষা হয়তো করবেন না। কারণ এই টুর্নামেন্টটিও বাংলাদেশে নয়। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের মাটি থেকেই মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর অবসরের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
বিসিবির কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ অবসরের ব্যাপারে বিসিবিকে কিছুই বলেননি। তবে টুর্নামেন্ট চলাকালীনও তারা অবসরের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। এরপর ২০২৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ রয়েছে। সে পর্যন্ত জাতীয় দলে তাদের খেলা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাতে এটিই তাদের শেষ বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট বলা যায়, এমনটিই জানিয়েছেন একটি সূত্র। ঐ সূত্রের মতে, এটিকে তাদের শেষ বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট বলা যায়, কিন্তু শেষ ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট বলা যায় না।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবসর নেওয়ার প্রচলন তেমন একটা নেই। তবে সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক বিদায়ের পথেই হাঁটছেন অনেকে। সেই পথকে ত্বরান্বিত করতে পারেন এই দুই পাণ্ডব। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা জানিয়েছিলেন মুশফিক। আর ২০২১ সালের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর গেল বছর ভারত সিরিজে টি-টোয়েন্টি থেকেও অবসর নেন রিয়াদ।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে মর্যাদার আসনে নিতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তারা। কিন্তু তাদের হাতে কখনো বৈশ্বিক ট্রফি ওঠেনি। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে টাইগার বাহিনী। সেটি বাস্তবে পরিণত হলে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা মাইলফলক হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকবে। এমনটি ভক্তরাও চান।