আজ সোমবার রাত ২:০২, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
বিদ্রোহ করা ফুটবলারদের মধ্যে বাফুফের সঙ্গে সব কথা বলতেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। এক বার, দুই বার নয়, বারবার সাবিনাকে ডেকে বোঝানো হয়েছিল। বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল নিজে কথা বলেছিলেন সাবিনার সঙ্গে। বুঝিয়ে ছিলেন পুনরায় কোনো সমস্যা হলে তারা কঠিনভাবে দেখবেন। তাতেও সাবিনার মন গলেনি। কীভাবে মেয়েদের ফুটবল অনুশীলনে ফেরানো যায় তার প্রত্যেকটা উদ্যোগের সঙ্গে ছিলেন মাহফুজা আক্তার কিরণ।
সাবিনাদের নিজ রুমে ডেকে এমনও বলেছিলেন তোমরা সব দোষ আমাকে দাও, তবুও অনুশীলনে ফিরে আসো। কোনোভাবেই কাজ হয়নি। চেষ্টা থামিয়ে রাখেননি নানাভাবে পথ খুঁজছিলেন কিরণ। সানজিদা আক্তারকে দিয়েও চেষ্টা করিয়েছেন। ‘সানজিদা তুমি অন্যদেরকে বোঝাও, গিয়ে বলো, সবাই যেন অনুশীলনে যায়। চুক্তিপত্র রেডি করা আছে। আমি স্বাক্ষর করে দিয়েছি। বাফুফের সভাপতিও স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। তোমরা দোতলায় গিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে নাও। প্লিজ, অনুশীলনে যাও। রাগ-অভিমান থাকলে, সব ভুলে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে অনুশীলনে ফিরে আসো।’
সাবিনাদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন সানজিদা আক্তারকে। সানজিদাও কিরণকে জানিয়েছেন, ‘আপা সবার সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা কেউ আসবে না।’ তবুও নাছোড়বান্দা কিরণ। চেষ্টা করে গেছেন। কিরণের কাছে দুই দিন পরই একটা ফোন আসে ফুটবলার মাসুরা পারভীনের। এই ফুটবলার কিরণকে জানিয়েছেন, ‘আপা আমরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই, বসতে চাই।’
কিরণ সঙ্গে সঙ্গে সেটি লুফে নিয়েছেন। এতদিন বুঝিয়েছেন, কোনো কাজ হয়নি। এবার বোধহয় কিছু একটা হবে। একটা ফোনই সবকিছু পালটে দিয়েছে। পুরো পুরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। কিরণ মাসুরাকে জানিয়েছেন, আগামী রোববার দুপুরে কথা বলবো। সেই দুপুরটি ছিল গতকাল। খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করে সংবাদমাধ্যমকে কী কী বলবেন, সব কথা ফুটবলারদের জানিয়েছেন। তারাও রাজি হয়েছে। খেলোয়াড়রা জানিয়েছেন ‘কিরণ ম্যাডামের কথা যেটা সেটাই আমাদের (১৮ বিদ্রোহী ফুটবলার) কথা।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুটবল ক্যাম্প বন্ধ, আরব আমিরাতে চলে যাবে জুনিয়র দল। আর বাকিরা চলে যাবেন নিজ নিজ বাসায়। আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে ঢাকায় ফিরলেও তারা ছুটিতে চলে যাবেন। কবে ক্যাম্প ডাকা হবে সেটি নিশ্চিত না। বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল অনুমতি দিলে ক্যাম্প ডাকা হবে। যারা চুক্তিতে আছেন তারা ফিরবেন। আর যারা চুক্তিতে নেই, তারা থাকবেন কি থাকবেন না, সেটি নিশ্চিত না। কিরণ জানিয়েছেন মেয়েরা ফিরলে বাফুফের সভাপতি, অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা যারা রয়েছেন তারা, কোচ এবং খেলোয়াড়রা সবাই মিলে বসবেন। সেখানেই আলোচনা হবে।’
বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার।
সাবিনারা কেন ছুটিতে যাবেন? এ প্রসঙ্গে কিরণ বলেন, ‘ওরা নিজেরাই ছুটি চেয়েছে। ওদের মানসিক অবস্থাও ভালো না। সিনিয়র মেয়েরা ব্রেক চায়। ছুটি কাটিয়ে ফিরুক।’ ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করতে চায় না নারী ফুটবল দলের ১৮ জন। প্রথমে সিনিয়র ফুটবলার কয়েক জন ছিলেন, পরে তাদের সঙ্গে ভিড়েছেন অন্যান্য ফুটবলার। সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৮। অনেকের ধারণা সাবিনা খাতুন চাইলে সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে পারতেন। কিন্তু সাবিনা ছাড়াও আরও দুই-এক জন সিনিয়র ফুটবলার কোচের বিষয়ে কথা তুলে বিদ্রোহে শামিল হয়েছেন। একটু একটু করে অন্যরাও এর সঙ্গে জড়ো হন।