আজ রবিবার ভোর ৫:১৬, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কালো সোনা উৎপাদনে ব্যস্ত কৃষক

নিউজ ডেস্ক |দুরন্ত নিউজ .কম
আপডেট : মার্চ ৮, ২০২৫ , ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ
ক্যাটাগরি : জনপদ

ফরিদপুর জেলার কৃষকরা কালো সোনা উৎপাদনে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের শীর্ষ জেলা ফরিদপুর। পেঁয়াজের বীজ যা কালো সোনা নামেই পরিচিত সেই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে পিছিয়ে নেই এ জেলার কৃষকরা। কৃষকরা জানান, সাদা ফুলে কালো বীজ, স্বর্ণের মতো দাম। তাই কৃষকরা এর নাম দিয়েছেন ‘কালো সোনা’। দূর থেকে মনে হয়, ভিন্ন কোনো সাদা ফুলের বাগান। জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় এ বছর বেড়েছে পেঁয়াজ বীজের চাষাবাদ।

জেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠজুড়ে পেঁয়াজ বীজের সাদা ফুল। হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ করছেন কৃষাক-কৃষাণীরা। পেঁয়াজ ভালো উৎপাদনের পর এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে পেঁয়াজ বীজের।

চাষীরা জানান, বছরের শেষ দিকে আবাদ শুরু, ফলন উঠে নতুন বছরের এপ্রিল-মে মাসে। এই ফুলের মধ্যে লুকিয়ে আছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ চাষীদের পেঁয়াজের বীজের চাহিদা মেটায় ফরিদপুরের এই কালো সোনা। এ বছর ফরিদপুরে মাঠের পর মাঠ আবাদ হচ্ছে এ বীজের। পেঁয়াজের গাছের গোলাকৃতি কদম ফুলের মতো সাদা ফুলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে মূল্যবান দানা। জেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠজুড়ে পেঁয়াজ বীজের সাদা ফুল। হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ করছেন কৃষাক-কৃষাণীরা। এক বছর বীজ সংরক্ষণ করে পরের বছরে করা হয় বিক্রি। তবে চলতি মৌসুমে মৌমাছি না থাকায় হাত দিয়েই পরাগায়ন করতে হচ্ছে চাষীদের।

তারা জানান, সার, কীটনাশক ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর আগের তুলনায় খরচ বেশি হয়েছে। প্রতি একর থেকে ৬-৮ মণ বীজ পাওয়া সম্ভব। প্রতি মন বীজ ৬০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো হয়েছে ফলন। ক্ষেতে এখন পরাগায়নের কাজ চলছে। সাধারণত মৌমাছি পরাগায়ন করে থাকে, কিন্তু এ সময়ে মৌমাছি না থাকায় হাত দিয়েই পরাগায়ন করা হচ্ছে। পরাগায়ন করার ফলে ফলন ভালো হয় বিধায় কষ্ট হলেও খুব সাবধানে হাত দিয়ে পরাগায়ন করছে।

ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুরের নারী উদ্যোক্তা শাহিদা বেগম ২০০৪ সালে মাত্র ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ শুরু করেন। চলতি বছরে তিনি ১০০ একর জমিতে বীজের চাষাবাদ করেছেন। দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই বীজের আবাদ করে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন তিনি। এআইপি (অ্যাগ্রিকালচারাল ইমপর্টেন্ট পারসন) পুরস্কারসহ পেয়েছেন নানান পুরস্কার। এ চাষির পথ অনুসরণ করে অনেকেই বীজ আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

নারী উদ্যোক্তা শাহিদা বেগম  বলেন, ”চলতি মৌসুমে ১০০ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজ আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ভালোই লাভবান হবো। আমার ক্ষেতে প্রায় ৭৫ জন নারী-পুরুষ বীজ পরিচর্যার কাজ করছেন। এখন হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ চলছে। এক থেকে দেড় মাস পর বীজ তোলা শুরু করবো। তারপর মাড়াই এবং প্রক্রিয়াজাত করে বীজ প্যাকেট করা হবে।’

বিদেশে বীজ রপ্তানি করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, শিশু সন্তানের মত সারা বছরই যত্ন করতে হয় পেঁয়াজের বীজের। একারণে আমার বীজের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইতোমধ্যেই অর্ডার পেতে শুরু করেছি। পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছেন। নারী শ্রমিক কমলা বেগম  বলেন, ”পেঁয়াজ বীজের সময় কাজ করে থাকি। বিশেষ করে পরাগায়নের সময় ও উত্তোলন শেষে বীজ ধোয়ার কাজ করে থাকি। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেতন পাই। এই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে স্বামীকে সাহায্য করি। আবার ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা এবং নিজের শখ পূরণের জন্যও এই টাকা কাজে লাগে।

শুধু কমলা বেগম ই নয়, এলাকার অনেক নারীই পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতে কাজ করে। বছরের শেষ দিকে আবাদ শুরু, ফলন উঠে নতুন বছরের এপ্রিল-মে মাসে।