আজ সোমবার ভোর ৫:৩১, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

ট্রেনের ইঞ্জিন হঠাৎ বিকল : আশপাশে নেই স্টেশন, অতঃপর…

নিউজ ডেস্ক |দুরন্ত নিউজ .কম
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫ , ১২:১৫ অপরাহ্ণ
ক্যাটাগরি : জনপদ

চলতি পথে হঠাৎ বিকল ট্রেনের ইঞ্জিন। আশপাশে স্টেশন নেই। বিকল্প আরেকটি ইঞ্জিন এসে ট্রেন সচল করতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। এত দীর্ঘ সময় ট্রেনে বসে থাকতে গিয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ওঠেন যাত্রী ও ট্রেনের স্টাফরা।

বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েন মহাবিপাকে। তাদের এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন এলাকাবাসী। যার ঘরে যা রান্না করা খাবার ছিল তা দিয়েই সবার ক্ষুধা নিবারণ করেন তারা।

এমনই এক মানবিক ঘটনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার তাঁতীবন্ধ এলাকার মানুষ।

গতকাল রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ের টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু বলেন, ‘পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচল করে ঢালারচর এক্সপ্রেস। গতকাল রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে ট্রেনটি ঢালারচর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

আমি ওই ট্রেনে দায়িত্ব পালন করছিলাম। পথিমধ্যে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে সাঁথিয়ার রাজাপুর স্টেশন পার হওয়ার পরে হঠাৎ করেই ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে ঈশ্বরদী থেকে বিকল্প ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুনরায় ট্রেনটি চালু করতে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট বেজে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় ট্রেনে বসে থাকতে গিয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। আশপাশে স্টেশন বা দোকানপাট কিছু ছিল না।

ট্রেনের স্টাফসহ অনেক যাত্রী ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েন স্বজনরা। ট্রেনের যাত্রী আর স্টাফদের এমন করুণ অবস্থা দেখে এগিয়ে আসেন রেললাইন থেকে কিছু দূরে বসবাসকারী মানুষগুলো। বিনা স্বার্থে যার যা সামর্থ্য ছিল, যার ঘরে যতটুকু রান্না করা খাবার ছিল—তাই দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।’

তিনি জানান, বাড়ি থেকে গৃহবধূরা খাবার নিয়ে ট্রেনের কাছে পৌঁছান। কারো হাতে ছিল ভাত-ডাল, কারো হাতে খিচুরি, কারো হাতে রুটি-সবজি, আবার কারো হাতে পানি। এর মাঝেই কেউবা তখন আবার কিছু রান্না করে নিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব। বৃদ্ধ এবং শিশুদের প্রতি তাদের বিশেষ নজর ছিল বেশি। তাদের খাবার পানিতে শান্তি পায় সবাই।

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘তাদের এমন মানবিক দৃষ্টান্ত আমি কোথাও দেখিনি। ওইসব মানুষগুলোর পরিবার দেখে মনে হয়েছে দিন এনে দিন খাওয়ার মতো। অথচ কিভাবে তারা মানুষের কষ্টে পাশে দাঁড়াল। পাবনার মানুষ যে কতটা আত্মিক আর অতিথি পরায়ণ তা আবারও প্রমাণ হলো।’

ঘটনাস্থল তাঁতীবন্দ গ্রামের বাসিন্দা আবেদ আলী বলেন, ‘আমি যখন দেখলাম স্টেশনের বাইরে হঠাৎ ট্রেনটা অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি অনেকে পানির জন্য, কেউবা খাবারের কষ্ট পাচ্ছে। আশপাশে কোনো দোকানপাট ছিল না। তখন আশপাশের সবাইকে সাধ্যমতো খাবার পানি নিয়ে আসতে বলি।’

হালিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘মানুষের কষ্ট দেখে কী ভালো লাগে, কন তো? যেহেনে টেরেন থামিছিল সেহান থেনে কিছুদূর আমারে বাড়ি। মেলাক্ষণ টেরেন দাঁড়া ছিল। মেলা মানুষ। আগা যায়ে দেহি কেউ পানি খুঁজতিছে, কেউ কিছু খাওয়ার তা খুঁজতিছে। তহন বাড়িত যায়া পানি আর ভাত-ডাইল ছিল, সেগুলাই লিয়ে দিছি। আমার নিজেরও ভালো লাগিছে।’

মানিক হোসেন নামের এক ট্রেন যাত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার কাজে রাজশাহী যাচ্ছিলাম ওই ট্রেনে। হঠাৎ ইঞ্জিন খারাপ হওয়ায় ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে সকালে বের হয়েছি ট্রেন ধরতে। তারপর বেলা গড়াতে গড়াতে প্রচণ্ড ক্ষুধা আর তৃষ্ণায় অস্থির লাগা শুরু করে। কিন্তু রেললাইনের আশপাশের মানুষগুলো যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে তা সত্যি অভূতপূর্ব।’