আজ সোমবার রাত ২:০৮, ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

ডিডি ইমরুলের উৎকোচ রাজত্ব, দুই কর্মচারীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন ঘুসের রাজত্ব

নিউজ ডেস্ক |দুরন্ত নিউজ .কম
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ , ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ
ক্যাটাগরি : জনপদ

কুমিল্লায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গত চার বছরে তিনি এ কার্যালয়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কামিয়েছেন বিপুল অর্থ, গড়ে তুলেছেন উৎকোচের রাজত্ব। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি নিজেকে গোপালগঞ্জের পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন। নিয়মিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের অফিসে ডেকে দিতেন হাঁসপার্টি, নানা উপঢৌকন। নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান দাবি করা ইমরুলের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামজুড়ে ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবির মেলা।

৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তিনি ভোল পালটে ফেলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সব ছবি ডিলিট করে দিয়েছেন। তবে ওয়্যারলেস অপারেটর সাহাবুদ্দিন এবং অফিস সহকারী কামরুন নাহারের মাধ্যমেই তিনি এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন ঘুসের রাজত্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের জুনে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) কুমিল্লা কার্যালয়ে যোগদান করেন চৌধুরী ইমরুল হাসান। সেখানে যোগদান করেই তৎকালীন সংসদ-সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার এবং তার অনুসারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কোনো নেতার তদবিরে তিনি কুমিল্লায় পোস্টিং পান।

সূত্র জানায়, ডিএনসির আওতাভুক্ত বিভিন্ন সেক্টর থেকে তিনি নিয়মিত উৎকোচ এবং মাসোহারা আদায় করছেন। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ডেঞ্জারাস ড্রাগ (ডিডি লাইসেন্স) নিতে হয় সব ক্লিনিক, হাসপাতাল, প্রিকাসর, কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠান এবং মদের দোকান, মাদক নিরাময় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। এসব লাইসেন্স দিতে তিনি চাহিদা অনুসারে উৎকোচ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ কার্যালয়ে ২৯ জন জনবল থাকলেও কার্যত ডিডি ইমরুল হাসান, ওয়্যারলেস অপারেটর সাহাবুদ্দিন আহমেদ, অফিস সহকারী কামরুন নাহারের নিয়ন্ত্রণে গড়ে উঠেছে অনিয়ম-দুর্নীতির সাম্রাজ্য। বাকি সব কর্মকর্তা-কর্মচারী রুটিন ওয়ার্ক করেন। নিজে অভিযানে না গিয়েও বিল-ভাউচার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন সহকর্মীদের খরচের টাকা।

সূত্র জানায়, সরকারি খরচে গোমতী নদীর তীরে একটি মাদক ধ্বংসের চুল্লি নির্মাণ করা হয়। ওই চুল্লি নির্মাণের অজুহাতে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। তাছাড়া ৫ আগস্টের পরও তিনি ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়বো’ মোড়কের খাতা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করে আসছেন। সম্প্রতি সরকারি বরাদ্দের টাকায় জেলার বুড়িচংয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে হাঁসপার্টি করেও তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন।

সূত্র জানায়, ডিডি ইমরুল আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ এবং সখ্য বজায় রাখছেন। বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করে যাচ্ছেন। তার এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এদিকে ডিডি ইমরুলের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বেশ কয়েকজনকে দিয়ে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে জোরালো সুপারিশ করান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেবিদ্বারের এক ক্লিনিক মালিক জানান, ডিডি (ডেঞ্জারাস ড্রাগ) লাইসেন্স নিতে উপপরিচালক ইমরুল হাসানকে ৬০ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে। ওয়্যারলেস অপারেটর সাহাবুদ্দিনের মাধ্যমে তিনি এ টাকা নিয়েছেন। একই এলাকার আল ইসলাম হাসপাতালের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ৭০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছি। আমার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমাদের এলাকার ২০-২৫টি হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিক ৬০-৭০ হাজার টাকা করে ঘুস দিয়ে ডিএনসি লাইসেন্স নিয়েছে। তাছাড়া প্রতিবার অপারেশনের মেডিসিন আনার ক্ষেত্রে ডিডির ছাড়পত্র আনতে নিয়মিত উৎকোচ দিতে হয়। চান্দিনা এলাকার আরেক হাসপাতালের মালিক জানান, ডিএনসির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুখ খোলা যাবে না।

কারণ, তিনি চাইলে আমার লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করতে পারবেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডিডি ইমরুল বলেন, ‘আমি গোপালগঞ্জের পরিচয় দিইনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে অনেকেই তাদের কাজে এসেছে। তাছাড়া আমি কোনো হাসপাতাল-ক্লিনিক বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুস নিইনি। আমার নাম বিক্রি করে কেউ ঘুস নিয়ে থাকলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ এ বিষয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিডি ইমরুল হাসানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।