আজ রবিবার সকাল ৮:২৪, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম প্রিয় আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান মেঘের রাজ্য খ্যাত সাজেক ভ্যালি এখন বিবর্ণ দগ্ধ ভূমি। আগুনের আগ্রাসী ছোবলে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ ছোঁয়া এ পর্যটন কেন্দ্রটি। শুধু রিসোর্ট, কটেজ, রেস্তোরাঁ নয় পাহাড়ের কোলে বসবাসকারী ত্রিপুরা ও লুসাই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী বাসিন্দাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই বসতঘরগুলোও ভস্মীভূত হয়ে গেছে। সাজেকে ভাসমান মেঘ আর বাতাস এখন ভারি হয়ে উঠেছে সর্বস্ব হারানো প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং অসহায় বাসিন্দাদের কান্না ও দীর্ঘশ্বাসে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় সর্বগ্রাসী আগুনের তাণ্ডব শুরু হয়ে মাত্র ৫ ঘন্টায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সাজেক ভ্যালি। ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসেব কষা এখনও শেষ না হলেও প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ অর্ধ শত কোটি টাকা। অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, কটেজ, দোকানপাট এবং স্থানীয়দের বসতঘরসহ সব মিলিয়ে ১৪০টি স্থাপনা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাজেক ইকো রিসোর্ট এর দ্বিতীয়তলা থেকে প্রথমে আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখের ফলকেই দাও দাও করে আগুন জ্বলে উঠে। সাজেকের অধিকাংশ রিসোর্ট কাঠ ও বাঁশের তৈরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই পুরো সাজেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
শতরঞ্জি রিসোর্টের মালিক নাইমুল ইসলাম জানান, এই মাসের ৩০ তারিখ রিসোর্ট উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগুনের সব স্বপ্ন শেষে হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার।
রফিকুল নামে এক পর্যটক বলেন, আগুন লাগার কথা শুনে সবাই হুড়োহুড়ি করে যার-যার রিসোর্ট- কটেজ থেকে বেরিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকজনের সাথে পর্যটকরাও আগুন নেভানোরে কাজে যোগ দেন। তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় গ্রামবাসীরা চেষ্টা করে আগুন নেভানোর। কিন্তু পানি না থাকায় এক মুহূর্তে সবাই অসহায় হয়ে আগুনের ধ্বংসলীলা দেখা ছাড়া কিছু করার উপায় ছিল না।
পর্যটন কেন্দ্র হতে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছতে আড়াই-তিন ঘণ্টা লাগে। সাজেক দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও কোন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই।
আগুনে বসতবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় চরম সংকটে স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ২০০ মানুষ। গতকাল তারা পাড়ার একটি স্টোন গার্ডেনে রাত কাটিয়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের জরুরি খাবার ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাজেকের রিসোর্ট মালিকেরা।
সাজেকের ইউপি সদস্য অনিত্য ত্রিপুরা বলেন, ‘সরকারের কাছে একটা আহ্বান, তারা যেন সাহায্যে এগিয়ে আসে।’
পর্যটক যেতে বাঁধা নেই
এদিকে, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে পর্যটক সাজেকে পর্যটক যেতে বাঁধা নেই। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক হাবিব উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।